পুরুষদের
শ্রেণীবিভাগ ও সঙ্গম
নারী ও পুরুষের সংযুক্ত
রতিক্রিয়ায় উভয়ের যে চরম উল্লাস হয় তার অধিকাংশ নির্ভর করে মন ও শরীরের ওপর। মনস্তত্ত্বের
দিক দিয়ে বলা যায় নারী ও পুরুষের মন পরস্পরের দিকে যথেষ্ট আকৃষ্ট থাকলে অর্থাৎ
উভয়ের ভালোবাসা পরস্পরের প্রতি প্রবল হলে এই যৌন সঙ্গমের সূখ খুব উচ্চস্তরের হয়। কিন্তু
দেহাংশের ওপরেও এই সুখ বোধ অনেকটা নির্ভর করে। কেননা পুরুষের পুরুষাঙ্গ নারীর
যোনির ভেতর প্রবেশ করে ঘর্ষণ করলে পুরুষের বীর্যপাত ঘটে এবং সেই সময়ই পুরুষের সুখ
সর্বোচ্চ মাত্রায় ঘটে। নারীরও যোনি ঘর্ষণে ও তথা থেকে রস স্খলনেই অধিক মাত্রায় সুখ
অনুভূত হয়। সুতরাং পুরুষাঙ্গের দৈর্ঘ্য ও নারীর যোনির বিস্তারের ওপরই নারীর সুখ
বোধ নির্ভর করে।
পুরুষের পুরুষাঙ্গ
সাধারণতঃ তিনভাবে বিভক্ত।
১। শশকীয়। ২। বৃষকীয়। ৩। অশ্বকীয়।
শশকীয়
লিঙ্গ
তার বচন হবে মিষ্ট, মন
সদা প্রফুল্ল, সে দেখতে সুন্দর এবং কোঁকড়ানো চুল বিশিষ্ট,
তার মুখ গোলাকার এবং দেহ মধ্যাকারের। তার হাত পা খুব হালকা এবং
সুন্দর। তার আত্নসম্মান জ্ঞান আছে। গুরু ও জ্ঞানীজনে ভক্তি থাকে। এর পুরুষাঙ্গ ছয়
আঙ্গুল লম্বা এবং বীর্য থেকে সুরভিগন্ধ বের হয়। সে খুব হালকা ভাবে বেড়ায় এবং
কামেচ্ছা মাঝে মাঝে উদ্ভূত হয়।
বৃষকীয়
লিঙ্গ
এরূপ ব্যাক্তিও কিছু
পরিমাণে মধুরভাষী হয়। তার ঘাড় গর্দান বলিষ্ঠ, কর্কশ কণ্ঠস্বর, রক্তবর্ণ হস্ত পদ এবং গতি চমৎকার। তার ভ্রু খাড়া এভং পেট কচ্ছপাকারে
গোলাকার। তার বীর্য এবং দেহ থেকে লবণাক্ত আস্বাদ বের হয়। তার গতি মাঝারি রকমের
কিন্তু তিক্ত স্বাভাব। তার পুরুষাঙ্গ নয় আঙ্গুল দীর্ঘ।
অশ্বকীয়
লিঙ্গ
এরূপ লোক সাধারণতঃ
বাচাল,
মুখ হয় লম্বা। লম্বা ও সরু কান, মাথা ও
অধর ওষ্ঠ সরু। তার কেশ ঘন সন্নিবিষ্ট ও বক্র। তার হাত পা খুব লম্বা এবং দৃঢ়। তার
লম্বা অঙ্গুলি কিন্তু নখের চেহারা সুগঠিত। তার স্বর যেন মেঘ গর্জন এবং সে দ্রুত পা
ফেলে হাঁটে। তার শুক্র থেকে যেন মদের গন্ধ বের হয়। তার পুরুষাঙ্গ প্রায় বারো
আঙ্গুল লম্বা হয়ে থাকে।
এইভাবে নারীর যোনিও
তিনভাগে বিভক্ত।
১। হরিণী যোনি। ২। ঘোটকী যোনি। ৩। হন্তিনী যোনি।
হরিণী
যোনি
এদের চটুল চক্ষুতে লাল
রেখা থাকে। তাদের মুখ পদ্মের মত প্রফুল্ল, বাবলা জাতীয় গাছের ফুলের মত
তাদের গাত্র চর্ম কোমল হয়। এদের স্তনও হয় কদম্ব গাছের ফুলের মত গোলকার বিশিষ্ট ও
নরম। গাত্র চর্ম হয় চম্পা পুষ্পের মত শ্বেতবর্ণ, টিয়াপাখীর
নাকের মত তাঁদের নাসিকা তীক্ষ্ণ ও লম্বা, দন্ত হয় মুক্তার
মত এবং গমনধারা হয় রাজহংসীর মত। কোকিলের মত কণ্ঠস্বর হয় সুমধুর। হরিণীর মত হয়
গ্রীবা। তাঁরা গুরুজন ব্রাহ্মণ, শিক্ষক ও দেবদেবীর প্রতি
বিশেষ ভক্তিমতী হয়। শুভ্র বসন পরিধান করে। খায় খুব অল্প পরিমাণে। যদিও এরা
বিলাসবর্তী হয় না। তথাপি অনুভূতিতে বেশ পারদর্শিনী। কথা বলে কম, ঘুমায় অল্প। তাঁদের যোনি ছয় আঙ্গুল গভীর এবং পদ্মগন্ধা।
ঘোটকী
যোনি
কৃশা ও স্থুলকায় হতে
পারে কিন্তু দীর্ঘকায় বহুবর্ণ বিশিষ্ট বেশভূষা এদের প্রিয় জিনিস। এরা ধৈর্যহীনা, এদের
স্তন হয় শিথিল। চক্ষু হয় কাপর্দ ও শ্যামবর্ণ কিন্তু বাঁকা চোখে কটাক্ষ মারতে খুব
পটু। এরা তাড়াতাড়ি হাঁটে। পুরুষের সঙ্গে সহবাসে বড়ই প্রিয় এবং রতিকলায় দংশন আঁচড়
এবং চিমটিতে বড়ই অগ্রসর। সুবিধা হলে অত্যধিক মদ্য পান করতে পারে। এদের কণ্ঠস্বর
কর্কশ এবং চিৎকার প্রবণ। লম্বা লম্বা দাঁত এবং খাঁড়া খাঁড়া চুল এদের বিশেষত্ব। অত্যন্ত
নিদ্রালু। এদের যোনি হয় নয় আঙ্গুল গভীর এবং মৎস্যা গন্ধ্যা।
হস্তিনী
যোনি
এদের গতি ভঙ্গী
হস্তিনীর মত। এদের আঙ্গুল হয় মাংসল এবং বাঁকা বাঁকা। গ্রীবা হ্রস্ব এবং মাংসল হয়ে
থাকে। ওষ্ঠাধর হয় পুরু পুরু। নিতম্ব বিশেষ চর্বিযুক্ত প্রচুর খাদ্য খেতে পারে। এরা
হস্তিনীর মত নিদ্রা যায়। এদের অঙ্গে বহু লোম থাকতে দেখা যায়, আচরণ
হয় নির্লজ্জ। এরা সর্বদাই পুরুষ সহবাসের জন্য প্রস্তুত কিন্তু বেশির ভাগই দেখা যায়
অর্থের বিনিময়ে। এদের যোনি খুব প্রশস্ত এবং প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোনও আকারের লিঙ্গ
ধারণ করতে পারে।
পুরুষাঙ্গের
দৈর্ঘ্য
পুরুষের
পুরুষাঙ্গ ছয়, নয় এবং বারো আঙ্গুল দীর্ঘ হয়ে থাকে এবং
দৈর্ঘ্য অনুযায়ী স্থুলত্বও কম বেশী হয়ে থাকে।
নারীর
যোনির দৈর্ঘ্য
নারীর যোনিও ছয়, নয়
ও বারো আঙ্গুল হতে পারে। কিন্তু প্রয়োজন অনুযায়ী বা উত্তেজনায় এদের যোনির ব্যাস
মাংসপেশীর ক্রিয়ার দরুণ কম বেশী হতে পারে।
পুরুষের পুরুষাঙ্গ এবং
নারীর যৌনাঙ্গ যদি সমান ব্যাসবিশিষ্ট ও দৈর্ঘ্যযুক্ত হয় তা হলে সঙ্গমকালে উভয়ই বেশ
সমান আনন্দ পেতে পারে, একে বলা হয় পূর্ণ মিলন বা সমআনন্দ।
কোন শশকলিঙ্গ পুরুষ যদি
হরিণী যোনিবিশিষ্ট্য নারীর সঙ্গে সঙ্গম কার্য করে অথবা কোন বৃষ লিঙ্গ পুরুষ যদি
হস্তিনী নারীর সঙ্গে সহবাস করে, তা হলে পুরুষাঙ্গ ও যোনি ঠিক
খাপে খাপে লাগতে পারে।
অসমান
রতি
এই অসমান রতিক্রিয়া ছয়ভাগে বিভক্ত হয়-
১। শশকীয় পুরুষ ও ঘোটকী নারী।
২। শশকীয় পুরুষ ও
হস্তিনী নারী।
৩। বৃষকীয় পুরুষ ও হরিণী
নারী।
৪। বৃষকীয় পুরুষ ও হস্তিনী
নারী।
৫। অশ্বকীয় পুরুষ ও হরিণী
নারী।
৬। অশ্বকীয় পুরুষ ও ঘোটকী নারী।
অসমান
সহবাসের অন্য বিভাগ
অসমান সহবাস আবার দুই
শ্রেণীতে বিভক্ত, যথা-
যদি পুরুষের লিঙ্গ নারী
যোনির গভীরতাকে ছাড়িয়ে যায় যেমন বৃষকীয় পুরুষ ও হরিণী নারীর যদি সঙ্গম হয় তাকে বলা
হয় কলিন যোগ। কিন্তু ঘোটকীয় পুরুষাঙ্গ এবং হরিণীর যোনিকে বলা হয় কঠিনতর যোগ,
কেননা এই শ্রেণীর পুরুষ ও নারীর সহবাস অত্যন্ত কষ্টকর হয় ও বেদনাদায়ক হতে পারে।
অপরপক্ষে শশকীয় পুরুষ ও
ঘোটকী নারীর সহবাস অথবা বৃষকীয় পুরুষ ও হস্তিনী নারীর সহবাস হয় শিথিল যোগ। এই দুই
প্রকার রতিক্রিয়ার মধ্যে বৃষ ও হস্তিনীর সহযোগ শিথিলতর যোগ হয়,
কারণ যদিও পুরুষাঙ্গ সম্পূর্ণভাবে যোনির মধ্যে হয়ত অর্ধেকের বেশি প্রবেশ করতে পারে
না। এক্ষেত্রে পুরুষাঙ্গ ও যোনির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ এমন ব্যবধান হয় যে এরূপ সহবাসে
সাধারণত সুখ ও অনুভূতি কিছুই হতে পারে না।
আরামপ্রদ
সঙ্গম
সর্বপ্রকার সঙ্গমের মধ্যে কেবল তিন প্রকার
সঙ্গম সবচেয়ে বেশি আরামদায়ক কিন্তু কঠিনতর যোগ ও শিথিলতর যোগ সহবাস মাত্র মাঝামাঝি
আনন্দ দান করতে পারে। কঠিনতর যোগ ও শিথিলতর যোগ সব প্রকার রতির মধ্যে অধম
প্রকৃতির। এতে সম্পূর্ণ সঙ্গম সুখ সম্ভবপর হয় না। আবার কঠিনতর যোগ ও শিথিলতর যোগের
মধ্যে শিথিলতর যোগ অধম প্রকৃতির, এতে সম্পূর্ণ সঙ্গম সুখ সম্ভবপর হয় না। কিন্তু
কঠিনতর যোগ ও শিথিলতর যোগের মধ্যে কঠিনতর যোগ অপেক্ষকৃত ভাল, কারণ এতে যোনি অঙ্গ পুরুষাঙ্গের ঘর্ষণ বিশেষ আনন্দপ্রদ ও নারীর
তৃপ্তিদায়ক।
এ সব সঙ্গমে নায়কের পুরুষাঙ্গ আরও কঠিনতর
সন্নিবেশিত হলেই নারী তার উরুদ্বয় ছড়িয়ে দেয়, তাতে পুরুষের দীর্ঘাকার ও
বৃহদাকার লিঙ্গ ভাল ভাবে প্রবেশ করতে পারে। স্থুলাকার পুরুষাঙ্গ সংকীর্ষ যোনির
মধ্যে প্রবেশ করাতে যোনির আগে ঘর্ষণ হয়, তাতে নারীর কাম
অনেকটা শান্ত হয়, নারীর প্রবল সুখ ঘটে থাকে। কিন্তু যদি
তার উল্টো হয় অর্থাৎ পুরুষাঙ্গ যদি যোনির দৈর্ঘ্য অনুযায়ী ছোট হয় তাতে নারীর
সুখবোধ কিছুটা কম হয়ে থাকে সন্দেহ নেই।
কামোত্তেজনার
প্রভাব
নারী পুরুষের যৌন
মিলনের সুখ, কাম উত্তেজনার প্রভাবের উপর অনেকটা নির্ভর করে। পুরুষের
কাম উত্তেজনা যদি প্রবল না হয়, তাদের সঙ্গমকাল যদি
বেশীক্ষণ স্থায়ী না হয় অথবা সঙ্গমকালে যদি পুরুষের শুক্র কম বের হয়, তা হলে এই সহবাসে অংশভাগিনীর সুখ বেশী হয় না। কিন্তু যাদের কাম তীব্র
তাদের রতিক্রিয়ায় নারী বেশি তৃপ্তি পেয়ে থাকে।
দুর্বলকাম, মধ্যমকাম ও তীব্রকাম পুরুষ
যে সব পুরুষ নারীর
চুম্বন,
অধর দংশন, আঁচড়ানো, কামড়ানো বিশেষ পছন্দ করে না বা তাতে উত্তেজিত হয় না, সে সব পুরুষের দ্বারা যৌন মিলন করলে, নারী
সুখী হয় না। এরূপ পুরুষকে বলা হয় দুর্বল কাম পুরুষ।
যে পুরুষের কাম
উত্তেজনা মাঝারী রকমের তাকে বলা হয় মধ্যম কাম পুরুষ।
যে সব পুরুষের কাম
উত্তেজনা খুব প্রবল রকমের এবং যার বীর্যপাত প্রচুর পরিমাণে ঘটে এবং যে পুরুষ তার
সঙ্গে রতি ক্রিয়াকারিণী নারী চুম্বন, আলিঙ্গন আঁচড়ানো ও কামড়ানোতে
বেশ আনন্দে যোগদান করে সে পুরুষকেই বলা হয় কামুক পুরুষ বা তীব্র কাম হতে পারে।
বিভিন্ন
প্রকার সমকাম ও অসমান কাম
সমকাম বিভিন্ন প্রকার
হয়ে থাকে। দুর্বল, মধ্যম ও প্রবল কাম পুরুষের সঙ্গে যথাক্রমে দুর্বল,
মধ্যম ও প্রবল কাম নারীর মিলন। অসমান কাম নারী ও পুরুষের মিলন হয়
ছয় ধরণের। সেগুলি হল-
ক) দুর্বল কাম পুরুষ, মধ্যমা কাম নারীর মিলন।
খ) দুর্বল কাম পুরুষ, তীব্র কাম নারীর মিলন।
গ) মধ্যম কাম পুরুষ, দুর্বল কাম নারীর মিলন।
ঘ) মধ্যম কাম পুরুষ, তীব্র কাম নারীর মিলন।
ঙ) তীব্র কাম পুরুষ, দুর্বল কাম নারীর মিলন।
চ) তীব্র কাম পুরুষ, মধ্যম কাম নারীর মিলন।
রতিক্রিয়ার
সময়
কত সময় ধরে যৌনাঙ্গ
মিলন হতে পারে সেই সময়ের ওপরেও নারী ও পুরুষের প্রভেদ নিরূপণ করতে পারা যায়। কেউ
অল্পক্ষণ স্থায়ী সঙ্গমকামী, কেউ মধ্যকাল সঙ্গমকারী,
কেউ বা বহুক্ষণ ব্যাপী সঙ্গমকারী। একই সময় ব্যাপী সঙ্গম উভয়
পক্ষে হলেই সেই সঙ্গম সর্বোৎকৃষ্ট বলে ধরা হয়। স্ত্রী পুরুষ উভয়েরই দীর্ঘকাল স্থায়ী
সঙ্গম, মধ্যকাল ব্যাপী সঙ্গম বা অল্পকাল স্থায়ী সঙ্গম হতে
পারে। উভয় পক্ষেই কাল সমান হলে উভয়েরই সন্তুষ্টি ঘটে।
নারীর
উল্লাস
কামশাস্ত্র লেখক উদ্দলক
বলেন, পুরুষের যেমন সঙ্গম শেষে বীর্যপাত ঘটে, নারীরও
সেরূপ ঘটে থাকে। পুরুষ যেমন রতিক্রিয়া আরম্ভ হওয়ার সময় থেকেই স্নায়বিক আনন্দ অনুভব করতে থাকে
এবং কিছুক্ষণ ধরে রতিক্রিয়া করার পর তার স্থানীয় স্নায়ুগুলি এমন উল্লাসের সৃষ্টি
করে যে বীর্যপাত হবার সঙ্গে সঙ্গে তার দেহ মনে সুখ বোধ চরম হয়ে ওঠে। সে আনন্দ ও
স্নায়ু চাঞ্চল্য একেবারে অভূতপূর্ব ও সর্বাধিক হয়ে থাকে। নারীর রতি
ক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গে বা আরম্ভে ততটা সুখ ও উল্লাস অনুভব করে না। শুধু যোনি নালীর
মধ্যে যে কন্ডুতি বা চুলকানি তারই কথাঞ্চিত উপশম ঘটতে থাকে। কিন্তু পুরুষের মত
নারীর কোনও বীর্যপাত ঘটে না, শুধু রসস্রাব হয়। সেই
রসস্রাবেও তাদের আনন্দ উপলব্ধি হয় বটে, কিন্তু পুরুষের বীর্যপাতকালীন
আনন্দের মত এতটা হয় না। নারীদের চরম উল্লাস অনেক সময় বীর্যপাতের আগে বা পরে ঘটতে
পারে। যদি ঠিক একই সময়ে তা হয়, তা হলে ঐ রতি ক্রিয়ায় নারী
ও পুরুষের উভয়ের পক্ষেই খুব উল্লাসপ্রদ হয়।
রসস্রাব
ও বীর্য
নারীর রসস্রাবেও কোন
সন্তান সঞ্চারক বীজ থাকে কিনা, ইহাই প্রশ্ন। যে সময়
বাৎস্যায়ন তাঁর কামশাস্ত্র লেখেন, তখন কামশাস্ত্রবিদদের
মধ্যে এ বিষয়ে অনেক মতভেদ ছিল। অনেকে বলতেন যে স্ত্রী
যোনি পরিসৃত রসেও সন্তান উৎপাদক জীবাণু থাকে। তা না হলে স্ত্রী ও পুরুষের রতির ফলে
সন্তান জন্মায় কি করে? আবার একদল কামশাস্ত্রবিদ বলতেন, নারীর যোনি নিঃসৃত রসে কোনও গর্ভ সঞ্চারক বস্তু থাকে না। এর মীমাংসায়
অনেকদিন পর্যন্ত কেউ পৌছাতে পারে নি।
নারীর রস
ও পুং বীর্যের পার্থক্য
আসল কথা পুরুষদের বীর্যপাতকালে
যথেষ্ট আনন্দ সঞ্চায় হয় এবং সেই বীর্যে সন্তান উৎপাদক বীজ থাকে। নারীর যৌন অঙ্গ
থেকে রসস্রাব হলে তাকে orgasm বলা হয়। ঐ নারীর যথেষ্ট পুলক
সঞ্চায় হয় বটে কিন্তু যতক্ষণ না তাদের যোনিদেশ থেকে উক্ত স্রাব বের হচ্ছে ততক্ষণ
লিঙ্গ সঞ্চালন করাবার অভিলাষ চরিতার্থ হয় না। কিন্তু উহার সঙ্গে সঞ্চারের কোনও
মৌলিক কারণ থাকে না।
এমনও দেখা যায়, নারীর
যতক্ষণ না পর্যন্ত পুলক ঘটছে, ততক্ষণ পর্যন্ত হয়ত পুরুষ
রতিক্রিয়া চালাছে। তাতে নারীর যোনিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে আনন্দদায়ক রসস্রাব ঘটল। কিন্তু তথাপি
এরূপ ঘটনা বার বার অনেক দিন ধরে ঘটলেও উক্ত নারী গর্ভবতী হয়
না। সুতরাং গর্ভ হবে কিনা এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে পুরুষের বীর্যপাতের ওপর। ঐ বীর্যে
সন্তান উৎপাদক বীজ থাকলেই তবে নারী গর্ভবতী হতে পারে।
পূর্ণ
তৃপ্তি
এমন ঘটনা প্রায় দেখা
যায় যে,
পুরুষের বীর্যপাতের পরেও নারীর সম্পূর্ণ যৌন তৃষ্ণা মেটে না। তখন
এক পুরুষের বীর্যপাত ঘটলেও অন্য পুরুষকে সে ইচ্ছা করে, কাম
চরিতার্থ বশত নিজের উপরে সংলগ্ন করে। পুরুষের বীর্যপাত ঘটলেই তার পুরুষাঙ্গ শিথিল
হয়ে পড়ে এবং সে আর সেই নারীতে বা অন্য নারীতে সঙ্গম করতে চায় না। নারীর কিন্তু
অন্য রকম ঘটে। তার যোনিদেশ থেকে রস বের না হওয়া পর্যন্ত সে আবার রমণ আকাঙ্খা
পরিতৃপ্ত করতে চায়। অনেক ক্ষেত্রে এহেন নারীরা অন্য পুরুষও গ্রহণ করে থাকে। সুতরাং
বেশ কিছু বিলম্বে তার চরিতার্থ ঘটে। যখন তার যোনিদেশে যথেষ্ট পরিমাণে রসস্রাব ঘটে
তখনই তার তৃপ্তি হয়ে থাকে।
নারী ও
পুরুষের উত্তেজনায় পার্থক্য
পুরুষ রতি ক্রিয়ার
প্রথমে যথেষ্ট উত্তেজিত হয়। কিন্তু একবার বীর্যপাত ঘটে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আবার রতিক্রিয়ায়
আর তার পূর্বের মত উত্তেজনা থাকে না।
নারীর উত্তেজনা কিন্তু
ভিন্ন প্রকারের। প্রথম রতিক্রিয়ায় সে বিশেষ আগ্রহ দেখায় না। কিন্তু যখন রতি ক্রিয়া
কিছুক্ষণ চলে তখন ক্রমশ তার আগ্রহ বাড়তে থাকে। তারপর পুরুষের বীর্যপাত ঘটলেও নারীর
রতি ক্রিয়ার আগ্রহ ক্রমশ বাড়তে থাকে।
এইজন্য কামশাস্ত্র
লেখকেরা বলেন, নারীর সঙ্গে রতিক্রিয়া আরম্ভ করতে হলে একেবারেই প্রথম
থেকেই রতিক্রিয়া করা উচিত নয়। প্রথমে নারীর সঙ্গে কথাবার্তা বলা দরকার, তারপর তাকে চুম্বন, দংশন, নখচ্ছেদ ও আলিঙ্গন ইত্যাদি প্রাথমিক ক্রিয়া করা উচিত। এ সকল প্রাথমিক
রসালাপ, অঙ্গমর্দন, অধর চুম্বন
ইত্যাদিতে যখন নারীর কামেচ্ছা প্রবল থেকে প্রবলতর হবে তখন সঙ্গমের জন্য প্রস্থত
হওয়া দরকার। একেবারে দর্শন মাত্রেই রতিক্রিয়া আরম্ভ করা উচিত নয়। তাতে নারীর
কামেচ্ছা তেমন জাগ্রত হয় না। কাজেই উভয়ের পক্ষে রতিক্রিয়া তেমন আনন্দদায়ক হয় না।
রসাস্বাদন
এছাড়া একথাও মনে রাখা
দরকার যে নারীর দেহ, মন সাধারণত খুব কোমল ও রসাস্বাদনে আগ্রহশীল হয়ে থাকে।
তাদের সঙ্গে মধুর ও মিষ্টি আলাপ জমাতে হবে। তাদের মন সাময়িকভাবে অনেক কঠিন ও
হিংস্র হলেও মাটি যেমন জল সেচন করতে করতে কোমল ও কর্ষণোপযোগী হয়ে পড়ে, তেমনি ঐসব হৃদয়গ্রাহী মিষ্ট কথা শুনে শুনে অন্তত তাদের কঠিন মনও
সঙ্গমে আকৃষ্ট হয়ে ওঠে। তাই প্রত্যেক রতি ক্রিয়ার উপক্রমণিকা হিসেবে তাদের সঙ্গে
মিষ্ট কথা, অঙ্গমর্দন, চুম্বন
ইত্যাদি আরামপ্রদ কাজ করে শেষে রতি ক্রিয়ায় ব্রতী হওয়া উচিত।
সমস্ত প্রিয় কার্যের
শেষ কাজ হল সঙ্গম বা দৈহিক মিলন। অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অলঙ্কারে ভূষিত না হলে
যেমন মাথার মুকুট পরানো যায় না, এও ঠিক তেমনি।
শ্রেষ্ঠ
কামতৃপ্তির উপায়
যাঁরা কাম বিজ্ঞানে
বিশেষভাবে পারদর্শী তাঁরা বলেন, সাধারণত চার রকম উপায়ে কামের
পূর্ণ তৃপ্তি ঘটতে পারে।
১। কোন কাজ অবিরত করতে থাকলে অনেকের নেশার উদয় হয় যেমন শিকার করা, সঙ্গীত চর্চা করা, মদ্যপান করা, খেলাধূলা করা ইত্যাদি।
২। কাল্পনিক সঙ্গম সুখ - সত্যি সত্যিই যোনি প্রদেশে লিঙ্গ প্রবেশ ক্রিয়া ছাড়াও মনে মনে রতিক্রিয়ার চিন্তা করলে, আলিঙ্গন, চুম্বন ইত্যাদি করতে থাকলে, সুখ অনুভব হয়।
৩। কোন নারীর প্রতি কামক্রিয়া করার সুযোগ না থাকলেও সেই নারী বা অন্য কোন নারীর সঙ্গে কামনার সঙ্গম করলেও শ্রেষ্ঠ তৃপ্তি হতে পারে।
৪। ইন্দ্রিয় ভোজ জনিত সুখ - শরীরে পাঁচটি ইন্দ্রিয় আছে যথা- চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক, এদের তৃপ্তির উপায় করলেও মিলনের মত শ্রেষ্ঠ সুখ হতে পারে।