বিয়ের প্রকারভেদ
হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ হমে বাৎস্যায়ন আট প্রকার বিয়ের কথা উল্লেখ করেছেন-
১। ব্রাহ্ম বিয়ে।
২। প্রজাপত্য বিয়ে।
৩। আর্য্য বিয়ে।
৪। দৈব বিয়ে।
৫। অসুর বিয়ে বা আসুরিক বিয়ে।
৬। গন্ধর্ব বিয়ে।
৭। পিশাচ বা পৈশাচিক বিয়ে।
৮। রাক্ষস বিয়ে।
যে আট রকম বিয়ের কথা বলা হল তার মধ্যে
প্রথম চার রকম - ব্রাহ্ম, প্রজাপত্য, আর্য্য ও দৈব
বিয়ে থাকে বিভিন্ন মন্ত্র ক্রমে। বর্তমানে প্রজাপত্য বিয়ের চলনই বেশি। এই সব
প্রথায় বিয়ে করতে বর ও কনের কোন প্রকার চেষ্টা করতে হয় না। পিতামাতা বা আত্নীয়
স্বজনই এই ধরণের বিয়ের ব্যবস্থা করে থাকেন। কেবল বিভিন্ন মন্ত্র অনুযায়ী বা পদ্ধতি
অনুযায়ী বিভিন্ন নামকরণ। এ ছাড়া যে সব বিয়ে আছে, সেগুলির
জন্য বর এবং কন্যার নিজের ব্যবস্থা করা দরকার। এগুলিতে পিতামাতা বা আত্নীয় স্বজনের
কোন দায়িত্ব নেই। যেমন ধর গান্ধর্ব বিয়ে। এ বিয়ে বর এবং কনে পরস্পরকে ভালোবেসে নিজে থেকে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে নি এবং নিজে কোন পুরুষকে আকর্ষণ
করতে পারে নি, তা হলে তাদের বিয়ে হবে আসুরিক মতে। যদি
পিতামাতাকে টাকা বা বেশ উপহার দিয়েও ঐ নারীকে বিয়ে করতে স্বীকৃত না করা যায়,
তাহলে তা হয় পৈশাচিক বা রাক্ষস বিবাহ।
গান্ধর্ব বিবাহ
গান্ধর্ব বিয়ের প্রথম দরকার নারীকে আকর্ষণ
করা। তা করতে হলে একটি সুনিপুণা ঘটকী আবশ্যক। যদি কোনও প্রেমিক তার মনের মত নির্বাচিত
নারীকে পেতে অসমর্থ হয় তা হলে তার দরকার ঐ নারীর ধাত্রী কন্যার সঙ্গে বন্দোবস্ত
করা। ধাত্রী কন্যাকে পাঠানো যেতে পারে ঐ নারীর কাছে। নারীর কাছে গিয়ে ধাত্রী কন্যা
পাণি প্রার্থী যুবকের গুণ, বিদ্যা, সম্পত্তি,
বিষয় ইত্যাদি নিয়ে নানান প্রশংসা করা। এইসব কাজের জন্যে নিপুণা ও
কৌশলময়ী একজন বিশ্বস্ত ধাত্রী কন্যা দরকার। তরুণীর বাড়ীর কোন বিশ্বাসী ও ধাত্রী
কন্যা ভাল হওয়া আবশ্যক। অবশ্য ধাত্রী কন্যা তরুণীর সমবয়সী
হওয়া প্রয়োজন। তার বেশ প্রভাব থাকা উচিত। সে তরুণীকে বেশ নিভৃতে নিয়ে গিয়ে পূর্বে
যেসব সম্বন্ধ তার জন্য এসেছে বা যে বরের সঙ্গে পিতামাতার মত আছে বিয়ে দিতে,
সেগুলির একে একে নিন্দা করবে। যেমন, অমুক
বাজে ছেলে আর রাম লোকটা মদ খায়, আমি
নিজের চোখে দেখেছি বা নিজে কানে শুনেছি। আর তার বাপ
এককালে ধনী ছিল এখন তার সর্বস্ব বিক্রি হয়ে গেছে, এবারে
তাকে তো পথে বসতে হবে। অন্য মেয়ের সঙ্গে তার ভালোবাসা
আছে। এই সব বলে তরুণীর মনে বীতরাগ জন্মে দেবে। তারপর বলবে, আমি যে ছোকরার কথা বলছি, তার বাপের অনেক
ভূসম্পত্তি আছে। অনেক বিদ্যা, অনেক গুণ, বহু টাকা রোজাগার করে। ভবিষ্যতে ঠিক রাজরাণী হয়ে থাকবে ইত্যাদি কথা বলে
তরুণটির নানা গুণ ব্যাখ্যা করবে। তারপর দুজনে নিভৃতে দেখা হবে, প্রেমলিপি বা প্রেমের কথা হবে। দুজনের মধ্যে
গভীর প্রেম ও মিলন হবে ভাল। শেষে গোপনে কোন ব্রাহ্মণ ডেকে এনে হোম করবে, বিয়ে হবে অগ্নিদেবকে সাক্ষী
করে, পরে অবশ্য আত্নীয়দের বলা চলে। এই হল গান্ধর্ব বিয়ে।
পৈশাচিক বিয়ে
যদি কোন তরুণ-তরুণীর মধ্যে গান্ধর্ব বিয়ে
করার উপায় না থাকে, তাহলে আর এক উপায় চলতে পারে। এ প্রথা বাৎস্যায়নের যুগে ছিল। দুজনে আগে প্রেম করবে, তারপর সুযোগ বুঝে গোপনে
নারীকে কোন মাদকদ্রব্য খাইয়ে অধজ্ঞানহীন ও উত্তেজিত করে
যৌন মিলন করবে। তারপর পুরোহিত ডেকে সেই নারীকে বিয়ে করবে। নারী রাজী হবে কারণ সে জানবে তার অন্য গতি নেই।
রাক্ষস বিয়ে
যদি কোন রুপসী নারীকে লাভ করা দুস্কর হয়ে
পড়ে, তখন তাকে কোন বাগান বা পথ থেকে লোকজনের সাহায্যে জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে
তাকে পরে ব্রাহ্মণ ডেকে হোম করে বিয়ে করার নাম রাক্ষস বিয়ে। পুরাকালে ক্ষত্রিয়
রাজারা এইভাবে বাহুবলে বহু নারীকে ধরে এনে বিয়ে করত। বর্তমানে এর চলন
প্রায় নাই।
আসুরিক বিয়ে
যদি কোন লোক রুপসী তরুণীর কোন আত্মীয় বা
আত্মীয়াকে অর্থের সাহায্যে ভুলিয়ে বা অন্য কোনও উপায়ে হাত করে তাকে এনে বিয়ে
করে উক্ত লোকটির সাহায্যে, একে বলা হয় আসুরিক বিয়ে। আসুরিক
বিয়ে আজকাল মাঝে মাঝে হয়, তবে লোকে তা বুঝতে বা জানতে
পারে না। তবে কন্যার বা আত্মীয়ের অমতে এ সব করা উচিত নয়।