সহপত্নীর
প্রতি ব্যবহার
লোকে সহপত্নী কেন রাখে? এ
বিষয়ে আলোচনা শুরু করে বাৎস্যায়ন বলেছেন, নিম্নলিখিত
কারণের জন্য লোকে সহপত্নী রাখে। তা হল-
১। প্রথম স্ত্রীর নির্বুদ্ধিতা বশত।
২। তার কড়া মেজাজের জন্য বাধ্য হয়ে।
৩। স্বামীর উক্তির বিরুদ্ধ ব্যবহারে।
৪। তার কদর্য রূপ হলে।
৫। সর্বদা রোগ ভোগ করতে থাকলে।
৬। তার গভীর আলস্য থাকলে। সে একেবারেই কাজকর্ম করতে চায় না।
৭। তার বন্ধ্যাত্ব বা কেবল কন্যা প্রসব করতে থাকলে।
৮। স্বামীর কামনা চরিতার্থ করতে না পারলে।
স্ত্রীর উচিত, যাতে
উপরোক্ত কারণগুলি না ঘটে তার ব্যবস্থা করা। তবে যদি তা নেহাৎ ঘটে যায় বা সে নিজে
বন্ধ্যা হয় তা হলে সহপত্নী গ্রহণ করতে স্বামীকে বাধা দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু
সহপত্নী বাড়িতে এলেই যে পূর্ব গৃহিণী নিজেকে অপমানিতা ও ঘৃণিতা মনে করবে, এর যথেষ্ট কারণ না ঘটলে এই মনোভাব হৃদয়ের
মধ্যে পোশণ করা উচিত নয়। তারই তো সংসার ছিল, এখনও তারই
সংসার থাকল। তবে স্বামীর ভালোবাসার একজন অংশীদার এসেছে বলেই সহ অংশীদারকে কেবলই
ঘৃণা এবং অপমান করতে হবে এর মধ্যে কি কোন সুনীতি আছে? বরং
তার সঙ্গে একত্রে বাস করে যাতে সংসারের কল্যাণ হয়, পরিবারস্থ
অন্যান্য লোকের খাওয়া, পড়া বা
আর্থিক কষ্ট তারা না পায়, তাই করা উচিত।
সহপত্নী এলে বড় গৃহিণী
তাকে নিজের ছোট বোনের মত আদর করে ঘরে তুলবে। কিন্তু তা না করে অধিকাংশ গৃহিণী
সহপত্নীর সঙ্গে ঝগড়া করে, তাকে হিংসা করে, এতে তার সংসার কখনও সুখের হতে পারে না। এতে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ আরও
বেড়ে যায়। স্বামী ঝগড়া, হিংসা এ সব
দেখে বড় বিরক্ত হয়, সে হয়ত তখন শান্তির আশায় প্রথমা
স্ত্রীকে ছেড়ে দ্বিতীয়াকে নিয়ে অন্যত্র চলে গেল, পূর্ব
পত্নীর সঙ্গে হয়ত সম্বন্ধ একেবারে ত্যাগ করল। এতে স্বামীর আনুকূল্য পাবার যেটুকু
আশা ছিল তা নষ্ট হয়ে গেল। সমস্ত পৃথিবীটাই তার কাছে যেন শূন্য হয়ে গেল। তার চেয়ে
তার উচিত নবাগত সহপত্নীকে সংসারে আনামাত্র নিজের ছোট বোনের মত নিজের কাছে টেনে
নেওয়া, তাকে আপন করে নেওয়া। রাত্রিকালে তার বিছানা ছেড়ে
স্বামীকে এবং নব বিবাহিতা সহপত্নীকে একত্রে শুতে দেওয়া উচিত। সন্ধ্যাবেলা ঐ নবাগতা
সহপত্নীর চুল বেঁধে দেবে, তাকে ভাল বেশভূষা পড়াবে, মুখে গন্ধদ্রব্য লাগাবে, তারপর তাকে স্বামীর বিছানায় পাঠিয়ে দেবে।
নবাগতা সহপত্নীকে নানা
প্রসাধন দ্রব্যে সজ্জিত করে তাকে নানাবিধ কামকথা শিখিয়ে দেওয়া উচিত। কোন রকম
স্বামীকে জানানো উচিত নয় যে তার মনে মনে ঈর্ষা বা দুঃখ জন্মেছে। বরং স্বামীকে মাঝে
মাঝে বলা দরকার যেন নতুন বউকে মাঝে মাঝে অলঙ্কার, বস্ত্র ইত্যাদি সে ক্রয় করে দেয়। সহপত্নীর সন্তান সন্ততিদের নিজের সন্তান
সন্ততির মত আদর যত্নে মানুষ করা উচিত, তাদের সেবা,
যত্ন করতে হবে নিজহাতে। তার আত্নীয়স্বজন কেউ এলে, তাকে নিজের আত্নীয়-স্বজনের মত যত্ন করতে হবে, তাদের
শ্রদ্ধা করতে হবে। এইরূপ করলে তার পূর্বে সংসার টিকে থাকবে, একথা মনে রাখা উচিত।
কনিষ্ঠা
সহপত্নীর কর্তব্য
কনিষ্ঠা সহপত্নী হয়ত
স্বামীর ভালোবাসা কিছু কিছু আয়ত্ত করে নিয়েছে,
তখনও তার উচিত জ্যেষ্ঠা সহপত্নীকে প্রথমে শ্রদ্ধা ভক্তি করা, সংসারের সব কিছুর জন্য তার মতামত নেওয়া। স্বামীকে প্ররোচনা দেওয়া যাতে সে জ্যেষ্ঠা সহপত্নীকে কিছু কিছু সম্মান দেয়, মাঝে
মাঝে তাকেও আদর করে। জ্যেষ্ঠার প্রতি ঘৃণা, হিংসা কি
কলহপ্রবণতা কখনও করা উচিত নয়।
বিধবার
কর্তব্য
কোন কোন বিধবা তার কাম বাসনা
চরিতার্থ না করতে পেরে বা মনস্কামনা সিদ্ধ করার জন্য সুদর্শন বলবান যুবক
পুরুষকে গ্রহণ করতে পারে। একে বিবাহ বলা হয় না, একে বলে
পূণর্ভূ। পূণর্ভূ হয়ে নতুন স্বামী পেতে হলে একটা অনুষ্ঠান করে স্বামীর বন্ধুদের
ভোজন করাবে, কিছু কিছু অর্থ তাদের দান করবে। তারপর নতুন
স্বামীর প্রদত্ত অলঙ্কার ও বস্ত্রাদি পরিধান করে স্বামীর আত্নীয়স্বজনের কাছে উপস্থিত
হবে। সে পূর্ব গৃহে যাবে না, এই কথা প্রকাশ করবে। নতুন
স্বামীর গৃহে এসে তার সঙ্গে কাম কলা প্রকাশ করবে।
অবহেলিতা পত্নী
যখন কোন
লোকের কতগুলি পত্নী থাকে, তখন হয়ত একটি পত্নী হয় অবহেলিতা।
সে হতে পারে স্বামীর অনাদৃতা। স্বামী তার সঙ্গে হয়ত যৌনকার্যও করে না। এমন অবস্থা
ঐ অবহেলিতা পত্নীর উচিত, যে পত্নী স্বামীর সবচেয়ে
প্রিয়তমা, তার সঙ্গে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব স্থাপন করা। তার
উচিত অন্যান্য পত্নীদের সঙ্গে বা বাড়ির অন্য আত্নীয় স্বজনের সঙ্গে সদ্ভাব রাখা। তার উচিত কামের যৌন কলা যা আছে তা নিপুণভাবে শিক্ষা করা হয়ত এই
নিপুণতার অভাবেই সে স্বামীর ভালোবাসা হারিয়েছে। তার সপত্নীর
সন্তান-সন্ততিদের প্রতি ভালোবাসা হারিয়েছে।
সংসারে যে সব পূজা আছে, ব্রত
পার্বণ আছে তাও তার ভাল ভাবে পালন করা দরকার। স্বামী যৌন সম্পর্কের ইচ্ছা প্রকাশ
করা মাত্র তার তাতে সাড়া দেওয়া উচিত। ইচ্ছা না থাকলেও স্বামীর মতে মত দেওয়া উচিত।
মোট কথা যাতে স্বামীর মন জয় করা যায় তার চেষ্টা করা উচিত। স্বামীর সঙ্গে কোন
পুরানো কলহের কথা বা ঝগড়ার কথা তার না তোলাই কর্তব্য। এমন
কি তখন তার স্বামীর অন্য কোন পত্নীর সঙ্গেও তার কলহ করা কদাচ উচিত নয়। যদি কোনও
পত্নীর সঙ্গে স্বামীর বিবাদ হয়, সে তার মীমাংসা করে দিতে
চেষ্টা করবে। যে সব কাজ করলে স্বামী তাকে ভালোবাসতে পারে,
তাকে পূর্ণভাবে বিশ্বাস করতে পারে, সে
সব কাজ করা উচিত। স্বামী তাকে যাতে ভালোবাসতে
পারে, প্রতিটি কাজ তার এমন ভাবে করা কর্তব্য।
অন্তঃপুরের
মহিলাদের কর্তব্য
রাজার অন্তঃপুরে
সাধারণতঃ প্রত্যেক রাণীর পৃথক পৃথক মহল বা ঘর থাকে। রাজার একজন করে চাকরানী বা
দূতী থাকে। তাকে দিয়ে বলে পাঠান, নির্দিষ্ট রাতে তিনি কোন
রাণীর কাছে রাত্রি যাপন করবেন। রাজ অন্তঃপুরে প্রধান মহিষী থেকে পরস্পর স্তর আছে। মাঝে
থাকেন উপপত্নী, বাঈজী ও বারাঙ্গনা প্রভৃতি, সব শেষে থাকেন রাণীরা। রাণীদের উচিত চাকরানীদের মাধ্যমে রাজার কাছে
মালা, চন্দন, সুগন্ধি প্রভৃতি
পাঠানো যাতে রাজা তার কথা আগে মনে করেন। রাজার কাছ থেকে
যেমন আদেশ হয়, সেই অনুযায়ী রাজা ইচ্ছামত অন্তঃপুরিকাদের
অনুগৃহীত করে থাকেন। এই বিষয়ে রাণীদের উচিত নয় রাজার বিরুদ্ধে কোন মত প্রকাশ করা।
বহুপত্নীক
লোকের কর্তব্য
বহুপত্নীক লোকের
কর্তব্য তার প্রতিটি স্ত্রীকে সন্তুষ্ট রাখা, তাদের কাউকে অবহেলা না করা। যদি
কেউ কোন দোষ করে থাকে তবে তার অপরাধ অনুযায়ী শাস্তি দেবে,
মিথ্যা কাউকে শাস্তি দেবে না, প্রমাণ না পেলে তা সঠিক বলে
বিশ্বাস করবে না। সে একজন পত্নীর সঙ্গে কিরূপ কামকেলি করে থাকে তা অন্যের কাছে
প্রকাশ করবে না। একজনের যোনির গঠন কেমন তা কদাচ অন্যকে বলবে না, এতে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। যদি তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়, সে ধীর স্থির মস্তিষ্কে তার বিচার করবে। কদাচ যেন এর অন্যথা না হয়। সঙ্গম
সময় কোন স্ত্রীর কাছে কতটা আরাম পায় অন্যের কাছে তা বলা অনুচিত। প্রত্যেকের কাছেই
তার প্রশংসা করা উচিত। তাতে সবাই তাকে ভালোবাসে।